কন্টেন্টে যাও

নিম্মি #২

নিম্মি উঠে এসে মেরাজ সাহেবের পাশে বসলো। ইয়ারফোনের একটা প্রান্ত কান থেকে খুলে বাড়িয়ে ধরলো। মেরাজ সাহেব সেটা হাতে নিয়ে বললেন,

নিম্মি, আমাকে যেসব কথা বললি এগুলো নিয়ে এখন আর কারো সাথে আলোচনা করিস না। আমি…

অকারণ চিন্তা করছো, বাবা। রিলাক্স হয়ে গান শোন তো। আমি একটু আসি, কাজ আছে কিছু।

নিম্মি ইয়ারফোনসহ আইপডটা মেরাজ সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিম্মি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মেরাজ সাহেব কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে হাতের আইপডটার দিকে তাকালেন, ভ্রুজোড়া কুঁচকে আছে। গান শুনবেন নাকি কন্যাকে নিয়ে টেনশন করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। সোফার পাশে গোলাকার টেবিলটায় রাখা ল্যান্ডফোন হাতে নিয়ে তিনি নম্বর ডায়াল করলেন। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরে ওপাশ থেকে কল রিসিভ করার শব্দ হলো।

হ্যালো, আকবর?

আরে! মেরাজ নাকি? কি খবর? হঠাৎ করে মনে পড়লো যে?

কি অবস্থা রে তোদের?

চলছে কোনরকম। রেহানার শরীর একটু খারাপ করেছে। তুই হঠাৎ ফোন দিলি কেন সেটা বল। সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?

ভাবির আবার কি হলো?

আহ, ব্যাপারটা কি বল তো। তুই কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন?

মেরাজ সাহেব কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললেন,

তুই কি ব্যস্ত? একটু দেখা করতে পারবি?

বলে কি! ব্যস্ততা গুলি মারি। তোর সাথে দেখা করতে পারবো না, এইটা কোন কথা হলো!

কালকে সকালের দিকে অফিসে আসতে পারবি?

হুম। কিন্তু ব্যাপারটা কি?

কালকে দেখা হলে বলবো রে। রাখি এখন।

মেরাজ সাহেব ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালেন। বেশ রাত হয়ে গেছে। আজকে ঘুম আসবে না সহজে। টেনশন চেপে রয়েছে নার্ভের উপর। নার্ভ ঠাণ্ডা করতে হবে আগে। বারান্দায় কিছুক্ষণ বসা যায়। বারান্দায় চলে আসলেন তিনি। একপাশে রাখা বেতের চেয়ারে বসে পড়লেন। অন্ধকার আকাশে আধখানা চাঁদ ঝুলছে। হাতে ধরা আইপডের দিকে আরেকবার তাকিয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে দিলেন। চমৎকার গায় তো এই গায়কটা। মেরাজ সাহেবের ধারণা ছিলো আজকালকার ছেলেমেয়েরা শুধু চিল্লাপাল্লা মার্কা গান শোনে। কিন্তু সেরকম মনে হচ্ছে না। গায়কের কণ্ঠ শুনেই মনে হচ্ছে নিয়মিত রেওয়াজ করা গলা। গানের কথাগুলোও মেরাজ সাহেবের পছন্দ হয়ে গেলো। লিলি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তাঁকে পাশে নিয়ে এই গান শুনতেন তিনি। হায়, সেটা আর কখনোই হওয়ার নয়। প্রকৃতির হিসাব বড় নিষ্ঠুর। প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়ে দূর থেকে তাকিয়ে দুঃখ দেখা তার পছন্দের কাজ। মেরাজ সাহেবের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে গান শুনতে শুনতে। নিম্মির কাছ থেকে গায়কের নামটা জেনে নিতে হবে। যে গায়ক গান দিয়ে মন খারাপ করে দিতে জানে তার নামটা জেনে রাখা দরকার।