নিম্মি #১
মেরাজ সাহেব হতভম্ব হয়ে তাঁর কন্যার দিকে তাকিয়ে আছেন। কন্যার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, সোফায় বসে হাসিখুশি মুখে গান শুনছে। দু'কানে ধবধবে সাদা রঙের ইয়ারফোন লাগানো। ধবধবে সাদা ইয়ারফোন ধবধবে সাদা বেশিদিন থাকে না। ময়লা ধরে মলিন হয়ে যায়। ইয়ারফোনটা নতুন। গান শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে গানের তালে পা নাচাচ্ছে সে। মেরাজ সাহেবের দৃষ্টি পায়ের দিকে না। অন্যসময় হলে হয়তো পা নাচানো দেখে তিনি বিরক্ত হতেন, তবে এখন এইসব ছোটখাট জিনিস তাঁকে বিচলিত করছে না। তিনি তাকিয়ে আছেন কন্যার মুখের দিকে। একবার তিনি বড় বড় গোল চোখে তাকাচ্ছেন, পরক্ষণেই আবার চোখের দৃষ্টি সরু করে ফেলছেন। গত পাঁচ মিনিট ধরে তিনি বিরতিহীনভাবে এই কাজই করে যাচ্ছেন। মেরাজ সাহেবের কন্যার নাম নিম্মি। নিম্মি কানের থেকে ইয়ারফোন খুলে মেরাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো,
কি ব্যাপার, বাবা? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
মেরাজ সাহেব কন্যার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়ালে লাগানো টিভির দিকে তাকালেন। সেদিকে তাকিয়ে আবার নতুন করে চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। সংবাদ চলছে টিভিতে। উপস্থাপিকা মেয়েটার মুখ নড়ছে, কথা বের হচ্ছে না। ব্যাপারটা কি তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। এটা কি শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রচারিত সংবাদ ধরনের কিছু? তাই বা কিভাবে হয়, সেরকম হলে তো ইশারায় সব কথা বুঝিয়ে দেওয়া হতো। তিনি বিভ্রান্তভাবে কন্যাকে ডাকলেন,
মা?
নিজের কন্ঠস্বরই মেরাজ সাহেবের কাছে করুণ শোনালো। নিম্মি জবাব দিলো,
টিভি মিউট করা, বাবা। তোমার ডানপাশে দেখো রিমোট আছে।
মেরাজ সাহেব থতমত খেয়ে আবার আগের অবস্থায় ফেরত গেলেন। কন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে তাঁর চোখ ছোট-বড় হতে থাকলো। সে আবার ইয়ারফোন লাগিয়েছে কানে। টিভিটা মেরাজ সাহেব নিজেই মিউট করেছিলেন। তারপর টেনশনে মাথায় সব ওলটপালট করে ফেলেছেন। নিম্মি মেরাজ সাহেবকে ভয়ংকর কিছু কথা বলেছে কিছুক্ষণ আগেই। এমনভাবে বলেছে যেন খুব স্বাভাবিক কিছু বলছে। বলার পরে ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতে পা নাচানো শুরু করেছে। কিন্তু মেরাজ সাহেব ভয়াবহ টেনশনে পড়ে গেছেন সেসব শুনে। বলতে গেলে নিম্মিই মেরাজ সাহেবের পৃথিবী। যেভাবেই হোক নিম্মির খারাপ কিছু হতে দেয়া যাবে না। তবে এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত তাও তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা লাগবে। মেরাজ সাহেব গলার স্বর যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে নিম্মিকে জিজ্ঞেস করলেন,
কি গান শুনছিস রে?