নিম্মি #৩
বাবা…
মেরাজ সাহেব আইপডের গান বন্ধ করে কন্যার দিকে তাকালেন। তিনি ভেবেছিলেন নিম্মি হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমায় নি, বারান্দা এসে দাঁড়িয়েছে কখন। তিনি টের পান নি, চোখ বুজে গান শুনছিলেন।
ঘুমাস নি এখনো? আয়, বস…
নিম্মি এগিয়ে এসে বাবার পাশে রাখা আরেকটা চেয়ারে বসলো।
গানটা কেমন লেগেছে?
খুবই সুন্দর রে। তোরা যে এমন শান্ত গান শুনিস জানতামই না!
শুনবো না কেনো! গান ভালো লাগলেই আমরা শুনি। তোমাদের কাছে এখনকার অনেক গান ভালো নাই লাগতে পারে। তাই বলে, তোমাদের সময়ের যা ছিলো সেগুলোই গান আর আমাদের সময়ে যা করা হয় সব আবর্জনা এটা ভাবা কিন্তু ঠিক না। চেঞ্জ আসবে এটাই স্বাভাবিক।
মেরাজ সাহেব কিছু বলেন না, হাসেন। নিম্মি অনেকটা ওর মায়ের মতো হয়েছে, কথা বলার ভঙ্গিও ঠিক লিলির মতোই। নিম্মি বললো,
মার সাথে তোমার প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলতো, বাবা।
মেরাজ সাহেব হাসেন আবার,
কতবার শুনবি এই একই গল্প?
এই গল্পটা বলতে বলতে তোমার মুখ হাসিহাসি হয়ে যায়, দেখতে ভালো লাগে। তুমি অকারণ দুঃশ্চিন্তা করছো…
নিম্মি থামে, বাবার মুখের দিকে ঘুরে তাকায়। মেরাজ সাহেবকে বিভ্রান্ত দেখায়। নিম্মি বলতে থাকে,
আমাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার অনেক সুযোগ পাবে পরে, এখন করা লাগবে না। আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। তুমি গল্পটা শুরু করো তো…
মেরাজ সাহেব কন্যার দিকে তাকিয়ে হাসি দেন, পরিস্থিতি হালকা করার হাসি। পিচ্চি নিম্মিটা দেখতে দেখতে কবে যেন বড় হয়ে গেছে। অবুঝ শিশুর সাথে কথা বলার ভঙ্গিতে বাবাকেই বোঝাচ্ছে এখন। আদরের কন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন মেরাজ সাহেব, হাসিমুখে লিলির সাথে প্রথম দেখা হওয়ার গল্প শুরু করেন। বাবার কাঁধে মাথা রেখে মাঝ আকাশে ঝুলে থাকা আধখানা চাঁদের দিকে তাকিয়ে গল্পে ডুবে যায় নিম্মি। কল্পনায় মায়ের মুখটা দেখতে কোন কষ্টই করতে হয় না তার। স্পষ্ট দেখতে পায় লিলি নামের তরুণীটি রাগী-রাগী মুখে তাকিয়ে আছে সামনে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অপ্রস্তুত তরুণটির দিকে।