নিম্মি #৯
নিম্মি নিজের জন্য অর্ডার দিলো। রিশাদকে জিজ্ঞেস করলো ওর জন্য কি দেবে। রিশাদ বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো, মাথা না ঘুরিয়েই বললো,
তোর যা ইচ্ছা দে।
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলো। হঠাৎ করে রিশাদের কিছু একটা বদলে গেছে।
তোর আবার কি হলো রে? বাইরে কি দেখিস?
বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।
রিশাদ অত্যন্ত শান্তভাবে কথা বলছে, এতটা শান্ত কন্ঠে অন্যসময় কথা বলে না।
বর্ষাকালে বৃষ্টি তো পড়বেই…
রিশাদ নিম্মির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
তারপর, তোর অবস্থা কি রে? সেই তখন থেকে তো আমিই বকবক করে যাচ্ছি।
অবস্থা তো ভালোই।
আংকেল কেমন আছে?
একটু টেনশনে আছে মনে হয়।
রিশাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
টেনশন! টেনশন কিসের?
গতকাল রাতে উদ্ভট কিছু কথা বলে ফেলেছিলাম। সেটা নিয়ে টেনশনে পড়েছে।
হা হা। কি বলেছিলি? তুই কারো প্রেমে পড়ে গেছিস?
আরে, ধুর! সেইটা বললে সমস্যা ছিলো না। বলেছি, হঠাৎ করেই আমি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারছি। খুব গম্ভীরভাবে বলেছি। বিশ্বাস করে ফেলেছে। আকবর আংকেলের সাথে আজকে দেখা করার কথা, আমার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট জোগাড় করবে মনে হয় দুই বন্ধু মিলে।
রিশাদ কিছু না বলে নিম্মির দিকে তাকিয়ে থাকলো। নিম্মিই আবার কথা বললো,
উচিত হয় নি রে বলা। অকারণ টেনশন বাড়িয়ে দিলাম বাবার।
রিশাদ আরো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
আসলেই পারিস নাকি?
কি?!
মানুষের মনের কথা বুঝতে?
নিম্মি রিশাদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালো। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। ওয়েটার এসে আইসক্রিম দিয়ে গেলো। নিম্মি চামচ হাতে নিয়ে গম্ভীরমুখে বললো,
তুই এখন যার কথা ভাবছিস সে তার ঘরে জানালার পাশে বসে আছে।
রিশাদের মুখে কৌতুকময় হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। নিম্মি আইসক্রিম মুখে দিয়ে দু'মুহুর্ত চোখ বন্ধ করে থেকে বললো,
মেয়েটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে। আকাশী নীল আর ধবধবে সাদা।
বলে রিশাদের দিকে তাকালো। কৌতুকময় হাসি মিলিয়ে গেছে,
তোর আসলেই সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
নিম্মি খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
তাই? আসলেই কারো কথা ভাবছিলি নাকি? আমি তো ফাইজলামি করছিলাম…
নিম্মির হাসির ব্যাঙ্গ করলো রিশাদ,
হা হাহ হাহ! আইসক্রিম গলে যাবে, মাইন্ডরিডিংয়ের মতো স্টুপিড বিষয় বাদ দিয়ে আইসক্রিমের দিকে মনযোগ দে।
তারপর কথাবার্তা হলো খুব কম। রিশাদ আর নিম্মি যখন বেরিয়ে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। পায়ের কাছে বৃষ্টির ঝাপটা এসে পড়ছে। বিল্ডিংয়ের ছাউনি ছেড়ে আর দু'পা এগুলেই সরাসরি বৃষ্টিতে যেয়ে পড়তে হবে। নিম্মি রিশাদের দিকে তাকিয়ে এতোক্ষণে বললো,
হ্যাপ্পি বার্থডে রে।
হুম। আমি যদি তোকে বাসা পর্যন্ত না দিয়ে আসতে পারি তাহলে কি মাইন্ড করবি? আমার একটু কাজ ছিলো।
নিম্মি কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বললো,
উমম, নাহ। সমস্যা নেই।
রিশাদ ড্রাইভারকে কল করে ওদের গাড়িটাকে সামনে ডাকলো। দু'জনের কারো সাথেই ছাতা নেই। বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে ঢুকতে হলো। গাড়িতে ঢুকেই রিশাদ জিজ্ঞেস করলো,
তোর উইশটা কি ছিলো? এখনও বলিস নাই।
নিম্মি মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
পরে শোনা যাবে। এতো তাড়াহুড়া নেই কোন।
হুম, আচ্ছা।
ড্রাইভারকে নিম্মিকে বাসায় পৌঁছে দিতে বলে রিশাদ গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় নিম্মি দেখলো রিশাদ চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটা চোখে আড়ালে চলে যাওয়ার পর রিশাদ মোবাইল বের করে একটা নাম্বার লিখলো, কল দিলো। বেশকিছুক্ষণ ডায়ালটোন বাজার পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো। রিশাদ ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো,
হ্যালো…
ওপাশ থেকেও হয়তো হ্যালো বলা হলো।
কেমন আছো?
…
এইতো। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, দেখেছো?
…
হুম…
…
হাঁটছি, ভিজছি, ভাবছি…
…
কোথায় আবার, রাস্তার পাশে।
…
নাহ, করবে না। এতো ভাবতে হবে না।
…
তোমাকে।
…
ভিজবে না?
…
হুম, তাও তো কথা। তোমাদের বেলকনিটার ছাদ খোলা না? কথা শেষ হলে ওখানে চলে এসো।
…
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তো আছে। ওখানে যেমন, এখানেও ঠিক তেমনই… আচ্ছা, তুমি কি রঙের ড্রেস পড়ে আছো এখন?
…
কল্পনা করবো। চোখ বুজে ভিজবো।
কোথায় যেন বজ্রপাত হলো। তীব্র আলোর ঝলকানি আর কানে তালা লেগে যাওয়া শব্দ। মোবাইলটা কয়েকবার বিপ বিপ শব্দ করে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। রিশাদ আকাশের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে ফেললো। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো একই রকম। তোমার ওখানে যেমন, আমার এখানেও ঠিক তেমনই…